ফেসবুকে ছড়িয়েছে শামীম ওসমান ও তাঁর সঙ্গীদের গুলি ছোড়ার ভিডিও

নারায়ণগঞ্জে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও তাঁর সহযোগীদের গুলি ছোঁড়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। গতকাল শনিবার ফেসবুকে ২৯ সেকেন্ডের ওই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচির একপর্যায়ে সরকার পদত্যাগের আন্দোলনে রূপ নেয়। ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয় এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে চলে যান। আন্দোলনে নিহতের ঘটনায় শেখ হাসিনা, স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমানসহ আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের নামে একাধিক মামলা হয়েছে। সরকার পতনের পর শামীম ওসমান ও তাঁর সহযোগীরা আত্মগোপনে রয়েছেন।

ভিডিওতে দেখা যায়, শামীম ওসমান ও তাঁর কয়েক শতাধিক অনুসারী আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে শহরের চাষাঢ়া এলাকা থেকে বঙ্গবন্ধু সড়কে শহরের ২ নম্বর রেলগেইট এলাকার দিকে ধাওয়া দিতে দেখা যায়। সেখানে শামীম ওসমানের শ্যালক ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক তানভীর আহমেদকে (টিটু) গুলি ছুড়তে যায়। ভিডিওতে শামীম ওসমানের আত্মীয় (অয়ন ওসমানের শ্বশুর) ফয়েজ উদ্দিন (লাভলু), তাঁর ছেলে মিনহাজুল ইসলাম ও শীতল পরিবহনের বাসের পরিচালক শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ অনুপ কুমার সাহা, ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নিয়াজুল ইসলাম (২০১৮ সালে মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর ওপর অস্ত্র উঁচিয়ে ধরে আলোচিত) প্রমুখকে দেখা যায়। তাঁরা আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দিয়ে শহরের মণ্ডলপাড়া পর্যন্ত হটিয়ে দেন। ওই মহড়ার সঙ্গে গাড়ির বহরও ছিল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই দিন মহড়ায় শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমেরী ওসমান, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও আবদুল করিম (বাবু) ও তাঁর ছেলে এম আর কে রিয়েন, ছাত্রলীগ নেতা কাউসার আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে ১৯ জুলাই শহরের নয়ামাটি এলাকায় চারতলার বাড়ির ছাদে খেলার সময় ৬ বছরের শিশু রিয়া গোপ মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। অভিযোগ উঠেছে, শামীম ওসমান ও তাঁর সহযোগীদের গুলিতে রিয়া গোপের মৃত্যু হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জের সমন্বয়ক ফারহানা মানিক বলেন, ওই দিন (১৯ জুলাই) ওই এলাকায় কোনো পুলিশ সদস্য ছিলেন না। কার গুলিতে রিয়া গোপের মৃত্যু হলো, সেটি প্রশাসনকে খুঁজে বের করতে হবে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, শামীম ওসমান, তাঁর ছেলে অয়ন ওসমান ও তাঁদের অনুসারী শাহ নিজামের নামে অস্ত্রের লাইসেন্স রয়েছে। শাহ্ নিজাম ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি হকার ইস্যুতে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি চালিয়েছিলেন সিটি মেয়র আইভী ও তাঁর লোকজনের ওপর।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আমীর খসরু প্রথম আলোকে বলেন, ‘অস্ত্রের মহড়া দিয়ে গুলি করার ভিডিওটি আমাদের নজরে এসেছে। সেখানে কারা, কী ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করেছেন, তা খতিয়ে দেখা গেছে। লাইসেন্সকৃত বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার করে থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ গুলিবিদ্ধ হয়ে শিশু রিয়া গোপের মৃত্যুর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেদিন ওই এলাকা কোনো পুলিশ সদস্য ছিলেন না। কার গুলিতে রিয়া গোপের মৃত্যু হয়েছে, সেটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।