মেজর (অব.) বজলুল হুদাকে নিয়ে পরিবারের বিস্ফোরক মন্তব্য

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি মেজর (অব.) বজলুল হুদাকে ফাঁসিতে নয়, গলা কেটে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। মেজর বজলুল হুদার ছোট ভাই ও তার স্বজনরা প্রকাশ্যে এমন অভিযোগ করছেন। তারা বলছেন, কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসির বদলে তাকে ওইদিন জবাই করা হয়। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ভাইরাল হয়েছে। তবে সবকিছু জানার পরও পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় এতদিন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি মেজর (অব.) বজলুল হুদার পরিবার। এখন এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। 

মেজর (অব.) বজলুল হুদা ছিলেন আলমডাঙ্গা উপজেলার হাটবোয়ালিয়া গ্রামের প্রয়াত ডা. রিয়াজ উদ্দীন আহমেদের ছেলে। তিনি ছিলেন মেহেরপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা। উচ্চ আদালতের আদেশে ১৪ বছর আগে ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি রাতে ফাঁসি হয় মেজর বজলুল হুদার। কিন্তু ফাঁসির বিষয়টি মানতে নারাজ নিকটাত্মীয় ও এলাকাবাসী। এমনকি ২০১৭ সালে বজলুল হুদার কবরের নাম ফলকও ভেঙে দিয়েছিল চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জানিফসহ স্থানীয় আওয়ামী যুবলীগ কর্মীরা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবার

এলাকাবাসী জানায়, হুদার লাশ পরের দিন (২৯ জানুয়ারি ২০১০) সকাল ১০টায় আলমডাঙ্গার হাটবোয়ালিয়া গ্রামে তার নিজ বাড়িতে নেওয়ার আগে কয়েক হাজার পুলিশ, বিডিআর ও র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অবস্থান নিয়েছিল। লাশ নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ৫ মিনিটের মধ্যে লাশ দাফনের কার্যক্রম শেষ করার জন্য চাপ দিতে থাকে তার পরিবারের সদস্যদের।

কিন্তু পরিবারের সদস্য ও হাজার হাজার উপস্থিত মানুষের চাপের মুখে র‌্যাব কর্মকর্তারা পিছু হটে। কফিন খোলার পর দেখা যায় লাশ অর্ধেক ডুবে আছে রক্তের মধ্যে। আবার গোসল করানোর জন্য লাশ নামানোর পর দেখা যায় মেজর হুদার গলা কাটা, যা জাল বোনার মোটা সুতা দিয়ে সেলাই করা।

মেজর বজলুল হুদার লাশ গোসল করানো রফিকুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, ‘এটা একটা হত্যাকাণ্ড, লাশ জবাই করা। জবাই করে খেপলা জালের সুতা দিয়ে সেলাই করা ছিল। কমপক্ষে ৫-৬ ইঞ্চি পরিমাণ কাটা ছিলো। পুরাটাই ডিপ ছিলো। তখনও রক্তক্ষরণ হচ্ছিল, রক্ত বন্ধ হয়নি। আমরা যখন গাড়ি থেকে নামাই তখন কফিনের ভিতরের কাফনের কাপড় রক্তে ভেজা ছিল। একেবারেই রক্তে রঞ্জিত ছিল।’

মেজর (অব.) বজলুল হুদামেজর (অব.) বজলুল হুদা

মেজর বজলুল হুদার খালাতো ভাই আলমডাঙ্গা উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম ইত্তেফাককে বলেন, শৈশব-কৈশোর বজলুল হুদার সঙ্গেই আমি ছিলাম। সে আমার আপন খালাতো ভাই। একটি বিচারের নামে প্রহসন করে তাকে ফাঁসির বদলে হত্যা করা হয়েছে।

সেদিনের ঘটনা প্রসঙ্গে আবুল কাশেম বলেন, ভোর বেলার দিকে মেজর হুদার লাশ আসলো। এরপর চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হলো লাশ দ্রুত দাফন করতে হবে। লাশ আসার খবর ছড়িয়ে পড়লে স্বল্প সময়ের মধ্যে এলাকার হাজার হাজার মানুষ আসতে লাগলো।

আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি ছিল, লাশ যেভাবে আপনারা হস্তান্তর করছেন সেভাবে নয়, আমরা নিজেরাই ধোয়ার কাজ শেষ করে দাফন করব। পরিবার ও মানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন লাশ (মেজর হুদা) আমাদের কাছে হস্তান্তর করে। যখন লাশ ধোয়াতে যাওয়া হলো, তখন দেখা গেলো একজন ফাঁসির আসামির যে আলামত থাকে তার পরিবর্তে গলাটি লম্বা করে কাটা এবং গলায় কয়েকটি সেলাই দেওয়া। সেখান থেকে তখনও রক্ত ঝরছে। কফিনের কাপড় রক্তে ভেজা ছিল। এরপরও দু’দফা তার (মেজর হুদা) জানাজা শেষে নগর বোয়ালিয়ার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

মেজর (অব.) বজলুল হুদামেজর (অব.) বজলুল হুদা

মেজর বজলুল হুদাকে ফাঁসির বদলে হত্যা অভিযোগে সময়ক্ষেপণ কেন- সেই প্রসঙ্গে মেজর হুদার আপন ছোট ভাই বীমা কর্মকর্তা নুরুল হুদা ডিউক বলেন, তখন মেজর হুদার লাশ দেখতে আসা বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ সবাই বলছে এটা ফাঁসি নয়, হত্যা করা হয়েছে। এতদিন আমরা কিছুই বলতে পারিনি। আজকে ছাত্র জনতার ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে কয়েকশ জীবনের বিনিময়ে আমরা নতুন করে স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগ করছি। স্বাধীনতার এই শুভক্ষণে মেজর হুদার এই পৈশাচিক বিচারের বিষয়টি সামনে এসেছে। তাকে যে নারকীয়ভাবে হত্যা করা হয়েছিল, এর বিচার চাই। আমরা এর যথাযথ বিচার চাচ্ছি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা জানিয়েছি। বিভিন্ন মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আদালতকেও  জানিয়েছি।

ডিউক আরও বলেন, আমরা তৎকালীন সময়ে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা থানায় এবং ঢাকার লালবাগ থানায় মামলা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা কোনোভাবেই মামলা গ্রহণ করেনি। মামলা করতে দেয়নি আমাদেরকে। এটা যেহেতু রাষ্ট্রীয় ব্যাপার, সেহেতু রাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক আদালত সিদ্ধান্ত নেবে। তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদেরকে যেভাবে বলবে আমরা সেভাবেই মামলা করবো।