সম্প্রতি দেশে ক্ষমতার পালাবদলের পর গাঢাকা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, সংসদ সদস্য (এমপি) ও মন্ত্রীসহ সুবিধাভোগীরা। গত ৫ আগস্ট তীব্র ছাত্র আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে পালান শেখ হাসিনা। তার আগে তিনি পদত্যাগ করেন। তার পদত্যাগের বেশ কদিন আগে থেকেই সে সময়কার অনেক প্রভাবশালী দেশ ছেড়েছেন। আর হাসিনার ক্ষমতা ছাড়ার খবরে দেশ ত্যাগের একরকম প্রতিযোগিতা শুরু হয়। অনেকে বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন সীমান্তবর্তী বন্দরে আটকও হয়েছেন।
এর মধ্যে বুধবার (২১ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার বলছে, আওয়ামী লীগের অনেকেই অর্থের বিনিময়ে অবৈধভাবে ভারতে আশ্রয় নিচ্ছেন।
ওই সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, বাংলাদেশের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অবৈধভাবেই ভারতে যাচ্ছেন বাংলাদেশের ‘প্রভাবশালীরা’। তাদের নিরাপদে পৌঁছে দিতে কাজ করছে একাধিক চক্র। কেউ নিচ্ছে মাথাপিছু লাখ টাকা, কেউ ৫০ হাজার। এই চক্র নিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীও অবগত। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করেছে তারা।
বর্তমানে পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে সীমান্তে তৈরি হয়েছে অবৈধভাবে ভারতে যাওয়ার নতুন ‘সিন্ডিকেট’। পারাপার এবং আশ্রয়ের জন্য কেউ খরচ করছেন ২ হাজার টাকা (তারা বেশি দিন থাকছেন না), কাউকে দিতে হচ্ছে ২ লাখ টাকা (বেশি দিন থাকার জন্য)। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আর্থিক সঙ্গতি এবং সামাজিক পরিচিতি বুঝেই টাকা চাওয়া এবং নেওয়া হচ্ছে।
কাথুলিবাজার এলাকায় ব্যবসা করেন শেখ নাজিম (নাম পরিবর্তিত)। আনন্দবাজারকে তিনি বলেন, ‘আমরা এসব এলাকা হাতের তালুর মতো চিনি। কোথায় কাঁটাতার আছে, কোথায় নেই, সব মুখস্থ। কোথায় পাচারকারী কাঁটাতার কেটে রেখেছে, সেটাও জানি।’
তিনি বলেন, ‘এই বর্ষায় ভৈরব নদী টইটম্বুর। নদী পুরো খোলা। এ দেশ থেকে যারা ও দেশে (ভারতে) যেতে চাইছে, পরিচিত আর আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে শুধু সীমান্ত পার করিয়ে দিচ্ছি আমরা। বাকি দায়িত্ব ওদের।’
পারাপার করাতে কে কত নিচ্ছেন, এমন প্রশ্নে ব্যবসায়ী বলেন, ‘ঝুঁকি দু’পক্ষেরই রয়েছে। তাই টাকার ভাগাভাগিও সমান সমান।’ ভারত অংশের দেবাংশু বলেন, ‘কাঁটাতার পার হয়ে আমাদের চাষের জমি আছে। রোজ যাতায়াত করি। ও দিক থেকে বেশ কয়েকজন পরিচিত, আত্মীয়স্বজনরা ভারতে আসার জন্য মোটা টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। আমরা শুধু পার করে এখানে নিয়ে এসেছি। রাখার দায়িত্ব আমাদের নয়। সেটা দেখে অন্য লোক।’
বিএসএফ, পুলিশের নজর এড়াচ্ছেন কীভাবে, এমন প্রশ্নে দেবাংশু বলেন, ‘বিএসএফ এখন খুব সজাগ, সেটা ঠিক। তবে গ্রামে আমাদের সকলের সঙ্গে সুসম্পর্ক। তাই কাউকে আশ্রয় দিয়েছি জানলে কেউ মুখ খুলবে না। ও দেশ থেকে যারা আসছে, তারা তো সত্যিই বিপদে পড়েছে। বিপদে মানুষকে আশ্রয় দেওয়া তো মানুষেরই কর্তব্য।’
পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন গ্রামে এই ‘হঠাৎ অতিথিদের’ নিয়ে শঙ্কিত স্থানীয় বাসিন্দারা। যদিও ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চাইছেন না। নতুন পন্থায় অবৈধ অনুপ্রবেশ নিয়ে বিএসএফ উদ্বিগ্ন। সিন্ডিকেট চক্রের উপস্থিতি টের পেয়ে টহলদারি বেড়েছে সীমান্তবর্তী এলাকায়। বিএসএফ দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি একে আর্য বলেন, ‘বাংলাদেশের অশান্ত পরিস্থিতিতে সীমান্ত এলাকায় টহল কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলির বাসিন্দাদের সঙ্গে জনসংযোগ বৃদ্ধি করেছি আমরা। অনুপ্রবেশের সব রকম খবর রাখার চেষ্টায় বিএসএফ। বেশ কয়েকটি অবৈধ অনুপ্রবেশ আটকেও দিয়েছেন জওয়ানরা। গ্রেফতার হয়েছেন বেশ কয়েকজন। তবে সীমান্ত এলাকায় এই মুহূর্তে কোনো উত্তেজনাকর পরিস্থিতির খবর নেই।’
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) উপ-মহাপরিচালক (যোগাযোগ) কর্নেল শফিউল আলম পারভেজ বলেন, ‘যারা রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে বেআইনি এবং অন্যায় কাজ করছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অভিযুক্তরা বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিচ্ছে। বাংলাদেশে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ও দেশে যাতে কোনোভাবে রাজনৈতিক আশ্রয় না পায়, তার জন্য আমরা ভারত সরকারকে অনুরোধ জানাব।