সৌদির সাবেক গোয়েন্দা প্রধান: ইয়েমেন যুদ্ধের ফরমানে বাবার সই জাল করেছিলেন মোহাম্মদ বিন সালমান

ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে স্থলযুদ্ধে সেনাদের যুক্ত করতে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান একটি রাজকীয় ফরমানে তার বাবা সালমান বিন আবদুল আজিজের সই জাল করেছিলেন। সৌদির সাবেক গোয়েন্দা প্রধান মেজর জেনারেল সাদ আল-জাবরি এমনটাই দাবি করেছেন।

২০১৭ সালে দেশ ছেড়ে পালানোর আগ পর্যন্ত সৌদি আরবের গোয়েন্দাপ্রধান ছিলেন সাদ আল-জাবরি। তিনি বিবিসির ‘দ্য কিংডম: দ্য ওয়ার্ল্ডস মোস্ট পাওয়ারফুল প্রিন্স’ শীর্ষক প্রামাণ্যচিত্রে বলেন, ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া যুদ্ধ নিয়ে তিনি তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুসান রাইসের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন। সুসান রাইস তখন বলেন, ওয়াশিংটন কেবল বিমান অভিযানকে সমর্থন করে (স্থল অভিযান নয়)।

সাবেক এই গোয়েন্দাপ্রধান বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এ অভিযোগের একটি ‘বিশ্বাসযোগ্য ও নির্ভরযোগ্য’ সূত্র তার কাছে রয়েছে।

২০১৫ সালের মার্চে সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ সৌদি নেতৃত্বাধীন একটি জোট ইয়েমেনের বৃহত্তম শহর সানা’র নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর হুতিদের হটিয়ে দিতে ইয়েমেন সরকারের পক্ষে হস্তক্ষেপ করে।

জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুসারে, জোটের বিমান হামলায় হাজার হাজার বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। তখন হুথিরাও সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের বেসামরিক অবকাঠামোতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নিক্ষেপ করেছে।

ইয়েমেনের রাজধানী থেকে হুথিদের বিতাড়িত করতে ওই জোট ব্যর্থ হয়েছিল। এই গোষ্ঠীটি এখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির উত্তরের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের বেশিরভাগই বিচ্ছিন্নতাবাদী সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

ব্রিটিশ সরকারের গুপ্তচর বিভাগের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা সিক্রেট ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস-এমআই৬ এর সাবেক প্রধান জন সয়ার্স বলেন, মোহাম্মদ বিন সালমান রাজকীয় ফরমান জাল করেছেন কিনা তা তিনি জানেন না। তবে এটা স্পষ্ট, ইয়েমেনে সামরিক হস্তক্ষেপ করার সিদ্ধান্তটি ছিল মোহাম্মদ বিন সালমানেরই। এটা তার বাবার সিদ্ধান্ত ছিল না, যদিও তার বাবা এর সাথে ছিলেন।

বিবিসির প্রামাণ্যচিত্রটির অন্যত্র আল-জাবরি বলেন, ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে সাবেক শাসক বাদশাহ আবদুল্লাহ যখন হাসপাতালে মৃত্যুশয্যায়, তখন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তার কথা হয়। কথা বলার আগে যুবরাজ জাবরিকে তার মোবাইল ফোনটি বাইরে রেখে যেতে বলেন এবং যুবরাজ নিজেও একই কাজ করেন।

‘রাজপুত্র গুপ্তচরদের ভয়ে এতটাই ভয় পেয়েছিলেন, তারা যে ঘরে মিলিত হয়েছিল সেখানকার একমাত্র ল্যান্ডলাইন টেলিফোনটিও সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিলেন’, বলেন আল-জাবরি। তার ভাষ্য, যুবরাজ তখন সৌদির রাষ্ট্রীয় তেল উৎপাদক আরামকোর শেয়ার বিক্রি এবং অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করার চেষ্টা এবং সৌদি নারীদের কর্মক্ষেত্রে যোগদানের জন্য আরও স্বাধীনতা দেওয়ার পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন।

মুহাম্মাদ বিন সালমান তার উচ্চাকাঙ্ক্ষার সারসংক্ষেপ তুলে ধরতে বলেন, ‘আপনি কি আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের কথা শুনেছেন?’

‘বিষের আংটি’

তিন বছর আগে কলম্বিয়া ব্রডকাস্টিং সিস্টেমের ‘সিক্সটি মিনিটস’ অনুষ্ঠানে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আল-জাবরি অভিযোগ করেন, মোহাম্মদ বিন সালমান ২০১৪ সালে বিষের আংটি দিয়ে বাদশাহ আবদুল্লাহকে হত্যা করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। জাবরি বলেন, ‘ওই সময়ে তাকে রাজার সঙ্গে করমর্দন করা থেকে বেশ কিছুদিনের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।’

২০১৭ সালে কানাডায় পালিয়ে যাওয়ার আগে আল-জাবরি দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড ছিলেন। এর কিছুক্ষণ পরই তার তৎকালীন বস স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিন নায়েফকে গৃহবন্দি করা হয়। সাবেক এই শীর্ষ উপদেষ্টাকে প্রিন্স ও ভিন্নমতাবলম্বীসহ বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট সৌদি নাগরিকের মধ্যে একজন বলে মনে করা হয়।

আল-জাবরির দুই সন্তান ওমর, সারাহ এবং জামাতা সালেম আলমুজাইনি বর্তমানে সৌদি কারাগারে বন্দি রয়েছেন। ওমর ও সারাহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কলেজে পড়ার পরিকল্পনা নিলে ২০১৭ সালে সৌদি আরব ছেড়ে যেতে নিষিদ্ধ করা হয় তাদের। এছাড়া আলমুজাইনিকে দুবাই থেকে অপহরণ করে সৌদি আরবে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে আইনি নথিতে বলা হয়েছে।

তথ্যসূত্র: মিডল ইস্ট আই