বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ফলে পতন ঘটেছে স্বৈরাচার সরকার শেখ হাসিনার। সরকার পতনের পর আগুন দেওয়া হয় ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের বাড়িতে। সে সময় পুড়ে যায় জলের গান ব্যান্ডের গায়ক রাহুল আনন্দের ভাড়া বাড়িটিও। সেখানে ছিল হাতে বানানো অনেক বাদ্যযন্ত্র।
বাড়িটির পুড়ে যাওয়ার পর অনেকেই বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন। অনেকেই বলেছেন, সাম্প্রদায়িক সহিংসতার জেরে আগুন দেওয়া হয়েছে। তবে নতুন মোড় নিয়েছে ঘটনা। ‘জলের গান’ ব্যান্ড সামাজিক যোগোযোগ মাধ্যমে জানিয়েছে, সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শিকার নন রাহুল।
বঙ্গবন্ধুর বাড়ির আগুন ছড়িয়ে পড়লে পাশেই থাকা রাহুলের বাড়িতেও আগুন লেগে যায়। এদিকে মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) বিকেলে নিজের ফেসবুকে রাহুল আনন্দর স্ত্রী শুক্লা লিখেছেন, ‘বাইরে জনতার বিজয় মিছিলের চিৎকার। হঠাৎ দেখলাম পেছনের সব বাড়িতে আগুন। আমরা মুহূর্তেই দিশাহারা হয়ে পড়লাম। বুঝলাম ৩২-এর সব বাড়িতেই আগুন লাগানো হয়েছে। আমাদের বাড়ি সান্তুর রেস্টুরেন্টের পেছনে। পাশে আমাদের বাড়িওয়ালা জনাব আইনুল হকের তিনতলা বাড়ি, সেখানে প্রথম ভাঙচুর হয় ও আগুন দেয়।’
এরপর লিখেছেন, ‘যখন সান্তুরের গেট দিয়ে উল্লাসে জনতা ঢুকে পড়েছে আর সান্তুরে আগুন ধরাচ্ছে তখন আমরা বুঝতে পারছিলাম না কী করব। আমার যে ঘরভর্তি বাদ্যযন্ত্র। তাদেরকে বোঝানোর জন্য এগিয়ে গেলাম পরিবারের সবাই। তারা তখন ৩২ ধ্বংসের উল্লাসে কোনো কিছুই শোনার চেষ্টা করেনি। তবে কিছু মানুষ এগিয়ে এসেছিল। তারা চেয়েছিল অন্যদের বোঝাতে…কেউ কারো কথা শোনার মতো অবস্থায় ছিল না।’
রাহুলের স্ত্রী লিখেন, ‘একজন বলল, ১৪ বছরের রাগ। এই এলাকা ধ্বংস করবেই। বরং আপনাদেরকে আমরা সাবধানে বের করে দিচ্ছি। আপনারা এখান থেকে চলে যান। ৩২ ধ্বংস করার উন্মাদনায় আমার ঘর পুড়ে গেছে। শুধু আমার নয়, আমাদের বাড়ির মালিকের ঘরও পুড়েছে। আশপাশের আরো কিছু বাড়িঘরও পুড়েছে। আর কারো কোনো ক্ষতি না হোক।’
এরপর শুক্লা লিখেছেন, ‘আমি অনেকবার কিছু লিখতে চেয়েছি। কিন্তু কান্নায় আমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। আমি কোনো কিছু বলার মতো অবস্থায় নাই। তারা কেউ নির্দিষ্ট করে আমাদের বাড়ি পোড়াতে চায়নি, চেয়েছে ৩২-এর এই বাড়িগুলো ধ্বংস করতে। আমাদের তো সব গেছে। মানসিকভাবে আমরা বিধ্বস্ত। আমাদের বাস্তবতা আশা করি সবাই বুঝবেন।’
সবশেষে ঊর্মিলা শুক্লা লেখেন, ‘বাংলাদেশ সুন্দর হোক। সুন্দর হোক আগামীর পথচলা। আমরা সবাই মিলেই বাংলাদেশ।’