কে এই কুফা রায়হান, শেখ হাসিনার পদত্যাগের সাথে তার কী সম্পর্ক?

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনা-সমালোচনায় আসছেন অনেকেই। আর এরমধ্যে কোটা আন্দোলনের শুরু থেকেই আলোচনায় ছিলেন মোহাম্মদ রায়হান ওরফে কুফা রায়হান। এই রায়হানের কুফা কিংবা অমঙ্গল বা অলক্ষী হওয়ার পেছনে রয়েছে এক নির্মম ইতিহাস।

মূলত আর্জেন্টিনা দলকে সাপোর্ট করেই এই কুফা টাইটেল যোগ হয় তার নামের সাথে। পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশের জাতীয় কুফা হিসেবে মানুষের কাছে পরিচিতি লাভ করেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। অনেকেই মনে করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হঠাৎ এমন পরিনতির জন্য এই কুফা রায়হানও দায়ী। এখন জানবো সেই রহস্য আদ্যোপান্ত।

কুফা রায়হানের গল্পটা শুরু হয় ২০১০ সাল থেকে। মুলত তিনি আর্জেন্টিনা দলের একজন ডাইহার্ড ভক্ত। এক ভিডিওবার্তায় তিনি জানিয়েছিলেন- যতবার আর্জেন্টিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে ফেসবুকে পোষ্ট করেছেন, তবারই তার প্রিয় দল আর্জেন্টিনা সেই ম্যাচে হেরেছে। তার এই স্ট্যাটাস একসময় দেশের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

ফুটবলের বাহিরে ধীরে ধীরে দেশের প্রেক্ষাপটেও আলোচনায় আসেন কুফাখ্যাত এই রায়হান। অনেকেই মনে করেন শেখ হাসিনার পদত্যাগের জন্য এই কুফা রায়হানই দায়ী। এর আগে দেশে মেট্টোরেল চালু হওয়ার পর গত ৪ জুন কুফা রায়হান মেট্রোরেলে ভ্রমণ করেন। আর তার ফেসবুক প্রোফাইলে মেট্রোরেলে জন্য শুভকামনা জানিয়ে একটি পোস্ট করেন। তখন অনেকেই মনে করেন তার এই কুফা হয়তো আর কাজে লাগবেনা। কিন্তু কোটা আন্দোলনে মিরপুর ১০ মেট্রোরেল স্টেশনে জনতার আক্রমনের পরেই ফের তুমুলভাবে আলোচনায় আসে কুফা রায়হান। তার কুফার যে তীব্রতা সেটাকে সবাই এখন নিরেট বাস্তবতা বলে ধরে নিয়েছেন।

এরপর থেকে রায়হান তার অপছন্দের বিভিন্ন ব্যাক্তি ও সঙ্গগঠন নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় শুভকামনা দেয়া শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের শুভকামনা জানানোর পরেই স্থগিত করা হয় সেই পরীক্ষাও। অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্যি তিনি যখন যাকে শুভকামনা জানিয়েছেন তারপরেই সেই ব্যাক্তির জীবনে নেমে এসেছে ভংকর পরিনতি।

সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে শুভকামনা জানিয়ে পোষ্ট করার পরেরদিন তিনি ছাত্রলীগের রসানলে পড়েন। নেতাকর্মীরা ওবায়াদুল কাদেরকে ভুয়া ভুয়া ধ্বনি দেন। এখানেই শেষ নয়, এরপর তিনি ডিবি হারুনকে শুভকামনা জানিয়ে পোষ্ট করেন, তার কিছুদিন পরেই ডিবি থেকে সরিয়ে দেয়া হয় হারুনকে।

সর্বশেষ কুফা রায়হান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে মন থেকে শুভকামনা জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোষ্ট করেন। অবশেষে সবাই ভাবছিলেন এবার হয়তো কুফা রায়হানের দিন শেষ হবে। কারণ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনটা সেই মুহুর্তে একেবারে অসম্ভব ছিল।

কিন্তু সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করেছেন কুফা রায়হান। ফলে তার ভবিষ্যৎ কুফার তকমাটা রয়েই গেলো। কারণ শেখ হাসিনা ৫ই আগষ্ট পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগ করেন। আর এর পরপরই দেশের মানুষ তাকে জাতীয় কুফা হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

গতকাল কুফা রায়হান জাতির উদ্দেশে ফেসবুকে একটি পোষ্ট করেন। আর হুমকির সুরে বলেন যে, এই পোষ্ট চোখে দেখে সেটি শেয়ার না করলে তাদের জন্য থাকছে মন থেকে শুভকামনা। এর ফলে সেই পোষ্টটি দেশজুড়ে ব্যাপক আকারে ভাইরাল হতে শুরু করে। এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত পোষ্টটি শেয়ার করেছেন প্রায় ১ লাখ মানুষ।