বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে দায়েরকৃত অধিকাংশ মামলা বাতিল করে পুলিশ ও নিহত জনগণ নিয়ে আলাদাভাবে মামলার প্রস্তুতি চলছে। জনগণ হত্যাকাণ্ডের মামলায় পুলিশসহ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে হুকুমের আসামি তথা প্রধান আসামি করা হবে। এ ছাড়াও পুলিশ হত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আলাদাভাবে মামলা দায়ের করা হবে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, ছাত্র ও জনতার গণ আন্দোলনে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে সারা দেশে শতাধিক হত্যা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ সদর দপ্তর।
শেখ হাসিনার পাশাপাশি প্রধান আসামি তথা হুকুমদাতা হিসেবে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান, পুলিশ প্রধান, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার, ডিবি প্রধানসহ বিভিন্ন রেঞ্জের ডিআইজি ও ইউনিট প্রধানরা এই মামলার আসামি হবেন। ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ একাধিক এমপি ও মন্ত্রীদের নামও থাকছে এসব হত্যা মামলায়। অনেক ক্ষেত্র পুলিশ হত্যা মামলায় পুলিশ কর্মকর্তা বাহিনীর বিভাগীয় মামলায় জড়িয়ে যাবেন বলে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র মতে, সরকারি চাকরিতে কোটাবিরোধী আন্দোলন রূপ নেয় দেশের বিভিন্ন বিষয়ের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে। আন্দোলনটি ২৮ জুলাই থেকে সংঘর্ষের রূপ নেয়। প্রথম সংঘর্ষ হয় পুলিশ-ছাত্রলীগ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে। এ ঘটনায় কয়েক’শ পুলিশ সদস্য ও হাজারের মতো সাধারণ জনগণ নিহত হয়েছে। যদিও সঠিক পরিসংখ্যান এখনও পুলিশ সংগ্রহ করতে পারেনি।
৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে থানা পুলিশ কর্মবিরতি দিয়েছিল। ফলে পুলিশ সদস্য কতজন নিহত হয়েছে এবং সাধারণ জনগণ কতজন নিহত হয়েছে, তার সঠিক তথ্য এখনও সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।
ইতিমধ্যে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য দেশের প্রতিটি থানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে হাসপাতালে আসা লাশের তালিকা সংগ্রহেরও কাজ চলছে বেশ জোরেশোরে। এ সপ্তাহের মধ্যে তথ্য সংগ্রহ করে দ্রুত মামলা দায়ের করা হবে বলে জানা গেছে।
অবশ্য সরকার পতনের পর কর্মবিরতির আন্দোলনকারী পুলিশ কনস্টেবলদের সংগ্রহকৃত তথ্য অনুযায়ী সিরাজগঞ্জে ১৩, যাত্রাবাড়ি ৩০, হাইওয়ে পুলিশ ১, বাড্ডায় প্রায় ৩৫ জন নিহত হয়েছেন। যদিও এই সংখ্যা সঠিক কিনা তা পুলিশ সদর দপ্তর নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে নতুন আইজিপি ৪২ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু পুলিশের নিহতের সঠিক তথ্য উদ্ঘাটন হলে সংখ্যা আরও বেশি হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের কিছু থানার তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে কলাবাগান, ধানমন্ডি, রমনা, শাহবাগ, নিউমার্কেট, কোতোয়ালি, গুলশান, বনানি, মতিঝিল, মুগদা, শাহজাহানপুর, ওয়ারি, ডেমরা, উত্তরা পশ্চিম, দক্ষিণখান উত্তরখান, ভাসানটেক, দারুস সালাম ও রূপনগর থানায় আন্দোলনকারীরা হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি।
অন্য দিকে যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, বাড্ডা, পল্টন, মোহাম্মদপুরসহ বাকি সব থানার বেহাল দশা। হত্যার পাশাপাশি অস্ত্র লুটের ঘটনা ঘটে। পুলিশ সদস্যদের কর্মবিরতির মাধ্যমে মামলা প্রস্তুতি কাজের গতি বেড়ে গেছে। সবাই নিজ দপ্তরে যোগদানের পর আহত, নিহত ও অস্ত্র খোয়া যাওয়ার সঠিক তথ্য চলে আসবে।
একই সঙ্গে পুলিশের কোন সদস্যের নির্দেশে কেমন পরিস্থিতিতে গুলি করছে এবং কতজন সাধারণ জনগণ আহত ও নিহত হয়েছেন, সে তথ্য পাওয়া যাবে। পরবর্তী মামলা গ্রহণ করে তদন্ত শুরু করা যাবে।
অবশ্য সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানা, ঢাকার যাত্রাবাড়ী ও বাড্ডা থানায় পুলিশ নিহত হওয়ার ঘটনায় পুলিশের কমান্ডিং অফিসারদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
এ ছাড়াও সারা দেশে ৪ আগস্ট ও ৫ আগস্ট আইজিপিসহ ইউনিট প্রধান ও থানার ওসি অথবা মাঠ পর্যায়ের কমান্ডিং অফিসারদের দায় দায়িত্ব বিবেচনায় অনেক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে বিভাগীয় ও ফৌজদারি অপরাধ বিবেচনায় সংখ্যা অনুযায়ী হাজারের কাছাকাছি মামলা দায়ের করা হতে পারে। বিভাগীয় মামলায় আইজিপি সংশ্লিষ্ট ডিসি, এসপি, ডিএমপি কমিশনার ও রেঞ্জ ডিআইজিগণ মামলায় জড়িয়ে যাবেন।
এছাড়া প্রতিটি সাধারণ মানুষ, শিশু হত্যা মামলায় শেখ হাসিনা ও তৎকালীন পুলিশ প্রধান আসামি হবেন বলে নিশ্চিত করেছেন এক পুলিশ সুপার।
অপর এক সূত্র জানিয়েছে, সকল হতাহতের তালিকা, খোয়া যাওয়া অস্ত্রের সঠিক তথ্য সংগ্রহ করার পরে আরো কারা মামলায় আসবে, এ জন্য ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত পুলিশ সদর ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন মামলা প্রস্তুতিকারী সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে বিটিভি, সেতু ভবন, মেট্রো রেলসহ অনেক স্থাপনায় অগ্নিসংযোগসহ হামলার ঘটনায় রহস্য সৃষ্টি হয়েছে। এসব অগ্নিসংযোগে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জড়িত কি না, এনিয়ে জোড় আলোচনা চলছে। মেট্রো স্টেশন অগ্নিসংযোগে পরিবহন ব্যবসার অচল অবস্থা কারণ দায়ী থাকতে পারে বলে নতুন করে ভিন্ন চোখে তদন্ত করা হচ্ছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। তথ্য উদ্ঘাটনসহ নতুন মামলায় অনেক কিছু বের হয়ে আসবে বলে পুলিশ ও আন্দোলনকারীরা মনে করছেন।