২৬, ২৭, ও ২৮ জুলাই ২০২৪; তিনদিনে নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদসহ ৬ জন সমন্বয়ককে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়। ২৮ জুলাই রাতে ডিবি কার্যালয় থেকে সব কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা লিখিত বার্তা পাঠ করে শোনান। স্বাভাবিকভাবেই ধরে নেওয়া হয় যে তাদের উপর চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে কর্মসূচি প্রত্যাহারে বাধ্য করা হয়। এর আগে নাহিদ ইসলামের উপর ডিবি হেফাজতে নির্যতনও করা হয়।

২৪ জুলাই মেট্রোরেলে আগুন দেওয়ার অভিযোগে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক আবু হান্নানসহ গুরুত্বপূর্ণ ৪ নেতাকে গুম করা হয়। পরে ২৮ জুলাই গ্রেফতার দেখানো হয়। গ্রেপ্তারকৃত অন্যান্যরা হলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক ইমাম আল নাসের (মিশুক), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক বজলুল রহমান (বিজয়) ও ছাত্রদলের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-সভাপতি মো. ফেরদৌস (রুবেল)। ডিবি অফিসে নেওয়ার এক দেড় মিনিটের মধ্যেই সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সাইফুল ইসলাম নীরব, রফিকুল ইসলাম মজনু ও আমিনুল হকসহ প্রত্যেককে ২-৩ জন পুলিশের ঘাড়ে ভর করিয়ে আনা হয়। ছাত্রদল নেতারা বলেন তাদের প্রত্যেককে ভয়ংকর নির্যাতন ও ইলেকট্রিক শক দিয়ে আমাদের সামনে আনা হয়। এত বড় নেতাদের এমন অবস্থা দেখে তারা বুঝে নেয় তাদের অনাগত ভাগ্যে। এর পরই শুরু হয়ে যায় বর্বর নির্যাতনের সবধরণের প্রয়োগ। জম টুপি পরিয়ে নির্যাতনের মাধ্যমে তাদের শরীরগুলিকে নিথর ও সেন্সলেস করে রাখা হত। তারপর সিদ্ধান্ত হল মেরে ফেলে তুরাগ বা যাত্রাবাড়ীর কোথাও ফেলে দেওয়ার। কিন্তু মহান আল্লাহর পরিকল্পনায় তারা বেঁচে ফিরে আসে ৬ অগাস্ট ২০২৪। বর্বর নির্যাতনের মাধ্যমে মেট্রোরেলে আগুন দেওয়ার স্বীকারোক্তি করাতে চেয়েছিলো বিএনপির সিনিয়র নেতাদের নাম। তারপরও এই মানুষগুলি অন্যায়ের সাথে আপোষ করেনি।

জুলাই আন্দোলনের সমসাময়িক সময়েই ঢাকা কলেজ ছাত্রদল নেতা সাজ্জাদ হোসেনকেও গুম করে রেখে নির্যাতন করা হয়েছিল। যে নির্যাতনের ছবির সাথে নাহিদের ছবির মিল পাওয়া যায়, ছবিতে যদিও সাজ্জাদকেই বেশি নির্যাতিত মনে হয়েছে। তারপরও এই মানুষগুলি অন্যায়ের সাথে আপোষ করেনি।


আন্দোলন চলাকালে আদালত চত্বরের সেই ইউনিক দৃশ্য হ্যান্ডকাফ পরিহিত এক সন্তানকে পিঠে হাত চাপড়ে মায়ের ভরসা দেওয়ার ভিডিও হাজারও সন্তানকে, মা’দেরকে অনুপ্রেরণা জাগিয়েছিল। সেই ইমরান সানিয়াতের উপর কি বর্বর নির্যাতন হয়েছে, তার মা-বাবার (কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতুল্লাহ বুলু ও তার মা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হল ছাত্রদলের সাবেক (১৯৮০-৮২ ) সাংস্কৃতিক সম্পাদক) উপর কি পরিমান নির্যাতন হয়েছে তার খবরই বা কয়জন রেখেছে? তারপরও এই মানুষগুলি অন্যায়ের সাথে আপোষ করেনি।

গত ১৭ বছরে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের বহু নেতাকে এভাবে নৃশংস নির্যাতন করা হয়েছে। কেউ ফিরে এসেছে। কেউ আর আসেনি। ছাত্রদল নেতা নুরুজ্জামান জানির বুকে ৫৬ টি গুলি করতে হয়েছিল তার মৃত্যু নিশ্চিত করতে। চট্রগ্রামের ছাত্রদল নেতা নুরুল আলম নূরকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করে হত্যার করুন দৃশ্য আজও মনে পড়ে। তারপরও এই মানুষগুলি অন্যায়ের সাথে আপোষ করেনি।


দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপির ৭০উর্ধ অনেক সিনিয়র নেতাকে মাসের পর মাস জেলে রেখে মানুষিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। তারপরও এই মানুষগুলি অন্যায়ের সাথে আপোষ করেনি।

১৭ বছরের আন্দোলনে তোমাদের পাশে পাইনি। ছাত্র, সুশীল, সাংস্কৃতিক, শিক্ষক বা সাংবাদিক কাউকে পাশে পাইনি। উল্টো এই সকল মানুষগুলি বিএনপির আন্দোলনকে জঙ্গি ও আগুন সন্ত্রাস বলে প্রচার করেছে। আজ আবার সেই তোমরাই (ছাত্র, সুশীল, সাংস্কৃতিক, শিক্ষক বা সাংবাদিকগণ) একই রূপে ও একই সুরে, প্রশ্ন তোলো গত ১৭ বছরে তোমরা (বিএনপি) কি করেছো? সমমনা ছোট ছোট কিছু দলকে সাথে নিয়ে জনগণের অধিকারের সংগ্রাম বিএনপি একই লড়েছে।

অথচ ছাত্রদের প্রতিটি আন্দোলনে সর্বাত্মক সমর্থন, সহযোগিতা ও অংশগ্রহন করেছে বিএনপি। ১৮ জুলাইয়ের পর সমন্বয়করা যখন আন্দোলনকে স্থমিত করে ফেলে, তখন বিএনপির এক্টিং চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন “তারা আমাদের সন্তানদের রাজপথে হত্যা করছে। হাসিনার পতনের আন্দোলনে সর্বশক্তি দিয়ে চূড়ান্তভাবে মাঠে নামুন। আজ থেকে, এখন থেকে “

এখানেই শেষ নয় ১৬ ও ১৮ জুলাই নেতা-কর্মী ও জনগণকে আন্দোলনে সরাসরি অংশগ্রহণের আহবান করেন তারেক রহমান। ২৮ জুলাই নাহিদ ইসলাম যখন আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিলেও ১ আগস্ট ২০২৪ তারেক রহমান আবারো ঘোষণা দেন এক দফার: তিনি নেতা-কর্মী ও জনগণকে কোন ধরণের নির্দেশনা ছাড়াই খুনি হাসিনা গংয়ের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দেন। একজন গ্রেফতার হলে অন্যজনকে নেতৃত্ব নেওয়ার নির্দেশ দেন। ধারাবাহিক ঘোষণার পুনরাবৃত্তি করে ঘোষণা করেন “দফা এক দাবি এক: শেখ হাসিনার পদত্যাগ ” । ৪ অগাস্ট তারেক রহমান বার্তা দেন “প্রিয় দেশবাসী, ছাত্রদের ডাকে সাড়া দিয়ে যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে রাজপথে নেমে আসুন, প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। সেনাবাহিনীর প্রতি আমার আহবান- ‘দেশপ্রেমিক’ শব্দটির মর্যাদা রক্ষা করে ব্যারাকে ফিরে যান”।
বিএনপি এই আন্দোলনে স্বৈরাচারীর সবথেকে শক্তিশালী দানব, পুলিশ বাহিনীকে কোথায় কিভাবে ডিমোরালাইজেড করে ফ্যালে, তার প্রকৃত বাস্তবতা একটি রাজনৈতিক দল হিসাবে কখনোই জনসম্মুখে বলতে পারবে না। কারণ তারা একটি লিবারেল পলিটিকাল ফোর্স। বিবেকবান ও চিন্তাশীলদের “বিটউইন দ্যা লাইনে” বুঝে নিতে হবে। তারা সেটি জানে ও বুঝেও। কিন্তু নিজেদের একক কৃতিত্ব নেওয়া ও স্বার্থ হাসিলে কখনো তা শিকার করবে না।
বিএনপির এক্টিং চেয়ারম্যান নিজ দায়িত্বে কোথায় কিভাবে কোন কোন ছাত্র-যুবদের বিভিন্ন মিশন সফল করার দায়িত্ব বন্ঠন করেন তা লন্ডনের গুটিকয়েক মানুষ ছাড়া কেউ জানতে পারেনি। এমনকি স্থায়ী কমিটির সদস্য বা মধ্যম সারির নেতারাও নন (কারণ বিগত আন্দোলনে কিছু নেতাদের বিতর্কিত ভূমিকা সম্পর্কে তিনি খুব ভালোভাবে জানতেন)। কিন্তু তিনি কখনও বিজয়ের কৃতিত্ব দাবি করেননি। সবসময় ছাত্রদের প্রশংসা করে রাখছেন তার বক্তব্য। এমনকি সমন্বয়করা যখন এক্টিং চেয়ারম্যান ও বিএনপিকে নিয়ে ঐদ্ধত্যমূলক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন, তারপরও বিএনপির এক্টিং চেয়ারম্যান কখনোই ছাত্রদের কথার জবাব দেননি।
আজ তুমি একেলায় মহাজন হয়ে গেছো? সমন্বয়কদের কথা না হয় বাদই দিলাম। যে সকল উপদেষ্টা ও সু-চিলরা বৈষম্যহীনতার বুলি আওড়িয়ে বিজয়ের গৈরব গাঁথা হাইজ্যাক করে ক্ষমতার স্বাদ নিতে চায়, ভয় লাগে, সময়ের বদলায় তারা না জানি বৈষম্যের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়!!! কারো অবদানকেই সাইড করে ফেলার প্রবণতা নিজের পায়ে কুড়াল মারার সমতুল্য। আজকে আমি আপনাকে বাদ দিব, কালকে আপনি আমাকে বাদ দিবেন। অন্যথ্যায় চলতে থাকবে তোমাদের দেখানো পথ কিন্তু থামবে না আমাদের সংগ্রাম…